২৬শে নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় কণ্ঠশীলনের আয়োজনে ‘শততম আবর্তন উদ্যাপন ও সমাবর্তন ২০২১’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। কণ্ঠশীলন বাংলাদেশে প্রথম নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রমিত উচ্চারণ, বানান ও আবৃত্তি শিক্ষা’র শততম আবর্তন সম্পন্ন করেছে। বাঙালি জাতির গর্ব তার ভাষা, বাংলাভাষা। সেই ভাষা প্রতিষ্ঠায় জীবন দিতে হয়েছিল, নামতে হয়েছিল রাজপথে রফিক, সালাম, বরকতসহ ‘স্কুলের ছাত্র থেকে রিক্সাওয়ালা পর্যন্ত’ সকলকে। সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান – কণ্ঠশীলন খুব স্বল্পপরিসরে সেই মাতৃভাষার শুদ্ধ ও প্রমিতরূপকে ভাষাপ্রিয় মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে চলেছে বিদ্যায়তন, আবৃত্তি ও মঞ্চনাটকের মধ্য দিয়ে – দীর্ঘ ৩৭ বৎসর ধরে। আর এভাবেই গড়ে উঠেছে বৃহৎ কণ্ঠশীলন পরিবার, সাত হাজার সদস্যের, শতাধিক কর্মতৎপর কর্মীর।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা অনুষ্ঠানে প্রদায়ক গুণিন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কণ্ঠশীলন একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা প্রমিত উচ্চারণ, বানান ও আবৃত্তি শিক্ষার শততম আবর্তন সম্পন্ন করেছে। প্রমিত বাংলা ভাষার প্রসারে কণ্ঠশীলনের এই যে পথচলা তা সকলের জন্য অনুসরণীয়। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে কণ্ঠশীলনের কার্যক্রমকে যারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠানে সম্মাননা জানানো হয় কণ্ঠশীলনের প্রথম আবর্তন থেকে শততম আবর্তন পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া বর্তমান অধ্যক্ষ মীর বরকতকে। অনুভূতি প্রকাশে মীর বরকত বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক আবৃত্তিচর্চার শুরুতেই শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক, বাক্-শিল্পাচার্য নরেন বিশ্বাসের সঙ্গে কণ্ঠশীলনের প্রতিষ্ঠা থেকে যুক্ত ছিলাম এটা আমার সৌভাগ্য। বাংলাদেশে প্রমিত উচ্চারণ ও আবৃত্তিশিক্ষার একশত কোর্স সম্পন্ন করেছে কণ্ঠশীলন যা একটি ইতিহাস। ইতিহাস একদিনে তৈরি হয় না, তিল তিল করে কণ্ঠশীলন এই সাফল্য অর্জন করেছে অনেক মানুষের নিরলস শ্রমের বিনিময়ে। কণ্ঠশীলন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বহু শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদ পাঠক, রিপোর্টার, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন কণ্ঠশীলনের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ আবৃত্তি ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন কণ্ঠশীলন অধ্যক্ষ ওয়াহিদুল হক। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ সকল ফোরামের সঙ্গে কাজ করে চলেছে কণ্ঠশীলন। শুধুমাত্র প্রমিত উচ্চারণ ও আবৃত্তিশিক্ষাই নয় বাংলাদেশের সকল সাংস্কৃতিক, সামাজিক আন্দোলনে কণ্ঠশীলন ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত থেকে শিল্প-সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালী যুক্ত থেকে বক্তব্য দেন কণ্ঠশীলনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান এবং ভারতের কোলকাতায় নিযুক্ত ডেপুটি হাই কমিশনার তৌফিক হাসান। রাস্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান বলেন, কণ্ঠশীলনে একবার যারা যুক্ত হন, তারা কখনও বিযুক্ত হন না। তাইতো বহুবছর কণ্ঠশীলন থেকে দূরে থাকলেও আজ কণ্ঠশীলনের এই মাইলফলক অনুষ্ঠানে যুক্ত হতে পেরেছি। কণ্ঠশীলনের শততম আবর্তনের একজন শিক্ষার্থী জিএম আব্দুর রশীদ সুদূর ইরান থেকে আসেন এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য। এছাড়াও কণ্ঠশীলনের শততম আবর্তন উদ্যাপনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খালেক মল্লিক। তিনি বলেন, কণ্ঠশীলনের একজন শিক্ষার্থী হবার কারণে মানবিক গুণাবলী অর্জনের পাশাপাশি নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। কণ্ঠশীলন আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে সকলের সঙ্গে সহজভাবে মিশে যেতে হয়, সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। এরই ফলস্বরূপ কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধান করতে পেরেছি ঠাণ্ডা মাথায়।
এরপর কণ্ঠশীলনের সপ্তনবতি থেকে শততম আবর্তন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে অভিজ্ঞানপত্র বিতরণ করা হয়। সবশেষে কণ্ঠশীলন সভাপতি গোলাম সারোয়ার বলেন, কণ্ঠশীলনের এই ইতিহাস রচনার দিনে স্মরণ করছি তাদের, যারা বিভিন্ন সময়ে শ্রম-মেধা দিয়ে এগিয়ে দিয়েছেন কণ্ঠশীলনকে সাথে শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা করেছেন। কণ্ঠশীলন ভবিষ্যতে তার এ কার্যক্রম অব্যহত রাখবে। সভাপতি সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন কণ্ঠশীলন প্রশিক্ষক নরোত্তম হালদার ও ইলা রহমান।